আঁকা বাঁকা মেঠো পথটি সবুজে ঘেরা গ্রামের মধ্যে গিয়ে মিশে গিয়েছে। প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য গ্রামটিকে দিয়েছে এক নব যৌবন। নানা ধরনের পাখির সুমধুর কলকাকলিতে মুখরিত গ্রামটি। পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীতে হাঁসগুলি ডুব দিয়ে দিয়ে ছোট ছোট মাছ আর শামুখ খায়। সাদা বক মাছ ধরার আশায় গাছের ডালে বসে থাকে আবার পানকৌড়ি মাধ ধরার জন্য ডুব দিয়ে দিয়ে নদীর তলদেশে অনুসন্ধান চালায়। দু একটা মাছও পেয়ে যায়। এসবের মায়া যে কাউকে আকৃষ্ট করতে পারে। ওহ গ্রামের নামটা তো বলাই হয় নি এখনও। গ্রামের নাম সুখীপুর। গ্রামের নাম সুখীপুর হলেও এ গ্রামের মানুষের জীবনে সুখ নেই বললেই চলে। নানারকম কুসংস্কার আর ঝগড়া বিবাদে প্রায়ই রক্তারক্তি কান্ড ঘটে যায়। মাঝে মাঝে দরবার সালিশের মাধ্যমে এসব বিবাদের মিমাংসাও হয়ে থাকে। এ গ্রামে শিক্ষিত বলতে গুটি কয়েকজন লোকই আছে। তার মধ্যে আনন্দমোহন বাবু একজন। আনন্দমোহন বাবু পেশায় ছিলেন একজন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। তার পান্ডিত্যের জন্য আশপাশের গ্রামে বেশ সুখ্যাতিই ছিল। অংক বিদ্যায় পারদর্শীতার জন্য বেশ কয়েকবার পুরস্কারও লাভ করেন। ৬ সদস্যের পরিবারে অভাব অনটন লেগেই থাকতো। তারপরও তিনি নতুন নতুন জ্ঞান আহরোণ করেই গিয়েছেন। আনন্দমোহন বাবুর ৪ ছেলে সন্তান। পড়ালেখার ইচ্ছে থাকা সত্তে¡ও বড় ছেলে সদানন্দ মাধ্যমিকের গন্ডি পেরুতে পারে নি। সংসারের হাল ধরার জন্য কৃষি জমিতে কাজ শুরু করতে হয়। ২য় সন্তান নিত্যানন্দ কোনমতে মাধ্যমিকের গন্ডি না পেরুতেই পৃথিবীর মায়া তাকে ছাড়তে হয়। অনেক কষ্ট করে আনন্দমোহন বাবু তাকে কলেজে ভর্তি করিয়েছিলেন। স্বপ্ন ছিল ছেলেকে মস্ত বড় সরকারি কর্মকর্তা বানাবে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করে। ২য় সন্তানের মৃত্যুতে আনন্দমোহন বাবু মানসিক ভাবে একটু ভেঙে পড়েন। ৩য় সন্তান বিদ্যানন্দ দেখতে বেশ সুদর্শনধারী ও বেশ মোটাসোটাও। এমন ছেলে গ্রামে আর ২য় টি নেই। খুবই চঞ্চল প্রকৃতির এই ছেলেকে নিয়ে আনন্দ মোহন বাবু মাঝে মধ্যেই নানা ঝামেলায় পড়তেন। পাড়ার এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত চষে বেড়ানো ছিল যেন তার নেশা। সবার বাড়িতেই তার উঠা বসা ছিল। সকলের সমস্যা ও কষ্টের কথা শুনত। সময় পেলেই কারো না কারো কাজে সহায়তা করার চেষ্টা করতো। চঞ্চল প্রকৃতির হলেও বিদ্যানন্দ ছিল বেশ প্রখর মেধার অধিকারী ও সংযমী। নিজ বাড়ীতে বাবার হাতে গড়ানো ছোট্ট লাইব্রেরীতে রাত জেগে বসে বসে রপ্ত করতে থাকে গণিত সহ নানা ধরনের জ্ঞান। বিদ্যানন্দ এখন দশম শ্রেণীর ছাত্র। এবার তাকে নিয়ে বাবার অনেক স্বপ্ন। তাকে মানুষের মত মানুষ করতে হবে। সে যেন সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ মাতৃকার সেবায় নিয়োজিত হতে পারে। মাঝে মাঝে ২য় সন্তানের কথা মনে পড়লে বুকটা যেন ফাপড়ে উঠে। বিদ্যানন্দ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ ৪.৯৮ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। ছেলে তো পরীক্ষায় পাস করলো কিন্তু আনন্দ মোহন বাবুর কপালে চিন্তার ভাজ পড়লো ছেলেকে ভর্তি করানোর মত টাকা বর্তমানে তার নেই। স্ত্রী নীলাম্বরী রানীর দির্ঘ্যদিন জটিল রোগে আক্রান্ত থাকায় বেতনের সব টাকাই প্রায় চিকিৎসার কাজে ব্যয় হয়। ২য় ছেলের মৃত্যুর সময় নীলাম্বরী রানী মানসিক শক পেয়েছিলেন। তারপর থেকেই তার শরীর যেন ধীরে ধীরে শক্তিহীন হতে থাকে। আনন্দমোহন বাবু স্ত্রীকে চিকিৎসা করানোর জন্য অনেক ডাক্তার, কবিরাজকে দেখিয়েছেন। কিন্তু কোন সমাধান পান নি। সংসারের এপরিস্থিতির মধ্যেও সন্তানদের লেখাপড়া করানোর ইচ্ছা থেকে কখনও একবিন্দু সরে আসেন নি। ইতিমধ্যেই বড় ছেলে সদানন্দ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন পাশ^বর্তী গ্রামের হরিশংকর বাবুর মেয়ে সুমিত্রা রানীর সংগে। সুমিত্রা রানীর বাবা হরিশংকর বাবুরও আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো ছিল না। নিজের প্রচেষ্ঠায় সুমিত্রা রানী উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। তারপরেই বসতে হয় তাকে বিয়ের পিড়িতে। শাশুরীর অসুস্থ্যতার কারনে সংসারের সব কাজকর্মই তাকে একাই করতে হয়। এছাড়া শাশুরীর দেখাশুনাও তাকেই করতে হয়। আনন্দমোহন বাবু তার সহকর্মী মোঃ আব্দুল হাইকে ছেলের ভর্তির বিষয়ে কথা বলেন। এ কথা শোনার পর আনন্দমোহন বাবুকে ২ হাজার টাকা দেন সহকর্মী আব্দুল হাই। সেই টাকা দিয়ে আনন্দমোহন বাবু ছেলেকে কলেজে ভর্তি করান স্থানীয় কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে। ২য় বর্ষে অধ্যয়ন করার সময় অজানা এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় বিদ্যানন্দ। বিধাতার এক নিদারুণ পরীক্ষায় তাকে এবার হার মানতেই হলো। এক দিকে স্ত্রী অন্য দিকে ছেলের অসুস্থ্যতায় আনন্দমোহন বাবু অকুল সাগরে হাবু ডুব খাচ্ছে এমন অবস্থা। কোন মতেই ভাগ্যের সাথে পেরে উঠতে পারছেন না। একদিন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনন্দমোহন বাবুকে বললেন আনন্দমোহন বাবু আপনী এখন বাচ্চাদের সঠিক ভাবে পড়া শেখাতে পারছেন না। অল্পতেই বাচ্চাদের সাথে রেগে যাচ্ছেন।  আপনী কি  মানসিক ভাবে অসুস্থ্য হয়েছেন। স্যার  আপনী  তো জানেন আমার পরিবারের বিষয়টা। একদিকে আর্থিক অস্বচ্ছলতা  অন্যদিকে সংসারের বেহাল দশা। কোনটাই সমাধান করতে পারছি না। আপনী যাই করুন  আনন্দমোহন বাবু এটা আপনার পরিবারের সমস্যা আপনাকেই সমাধান করার চেষ্টা করতে হবে। এখানে আমাদের  কারো হাত নেই। আপনী বাচ্চাদের ভালো করে পড়াবেন এটাই আমার শেষ কথা। তা নাহলে আমি আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো। আনন্দমোহন বাবু মাথা নিচু করে বললো ঠিক আছে স্যার আমি চেষ্টা করবো সঠিক ভাবে ক্লাস নিতে। ছুটির পর বাড়ীতে এসে আনন্দমোহন বাবু স্ত্রী নীলাম্বরী রানীর কাছে বসে বিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলি বলতে লাগলেন আর কাঁদতে লাগলেন। স্বামীর এরুপ করুণ কান্না দেখে নিজেও কান্নায় ভেঙে পড়লেন। দিন শেষ রাত্রী নেমে এলো। অন্য দিনের চেয়ে আজ একটু আগেই পরিবারের সবাই খাওয়া শেষ করে ঘুমিয়ে পড়েছে। নীলাম্বরী রানী এবং আনন্দমোহন বাবু দুজনেই আজ যেন এক লম্বা গল্পের লাইন শুরু করেছে। ওগো শুনছো আজ আমার কেমন জানি মনটা ছটপট করছে। কিছুতেই শান্তি পাচ্ছি না। তোমার কিছুই হবে না সদানন্দের মা। আমি তোমার উন্নত চিকিৎসার জন্য গ্রামের মোড়ল কাকার কাছে এক লক্ষ টাকার ঋনের কথা বলেছি। উনি টাকা দিলেই আমি তোমাকে দেশের বাহিরে চিকিৎসা করানোর ব্যবস্থা করবো। আমার আর চিকিৎসা করে কি  হবে গো। আমি এখন মরে গেলেই বাঁচি। সংসারের যে অবস্থা তার মধ্যে দুইজন রোগীর চিকিৎসা করানো যে তোমার  পক্ষে কি কষ্টের হয়ে দাড়িয়েছে সেটা আমি বুঝি। বড় ছেলেটাও সংসারে তেমন কোন সাহায্য করতে  পারছে না। মেঝো ছেলেটা বেঁচে থাকলে হয়তো ওরা দুই ভাই মিলে সংসারের কিছুটা হাল ধরতে পারতো। সবই ভগবানের ইচ্ছে গো। হয়তো আমার কপালে সুখ লেখা ছিলো না। তুমি এত চিন্তা করো না সদানন্দের মা। দিনের পরে রাত যেমন আসে তেমনি আবার রাতের পরে দিন আসে সদানন্দের মা। হয়তো সৃষ্টিকর্তা আমাদের পরীক্ষা নিচ্ছেন। পরীক্ষায় পাশ করলে হয়তোবা তিনি আমাদের সুখ দিবেন। তোমার  কথাই যেন সত্য হয় গো। একটু সুখের মুখ দেখে যেন আমি মরতে পারি। তাহলেই আমার শান্তি। তোমার কিছুই হবে না, তুমি  ঈশ^রের উপর বিশ^াস রাখো তিনি আমাদের সংসারে অবশ্যই শান্তি ফিরে দিবেন। বিয়ের পর সদানন্দের জন্মের আগে কতই না কষ্ট করতে হয়েছিল আমাদের। সদানন্দের জন্মের পর তোমার চাকুরী পাওয়ার পর কিছুটা কষ্ট দূর হলেও ধীরে ধীরে সংসারে রোগ ব্যাধির কারণে দুঃখ নামক বোঝার ভারটা যেন বাড়তেই থাকলো। সবই তার ইচ্ছে সদানন্দের মা। যিনি পড়েন তাকেই তো পরীক্ষা দিতে হয়। সেই পরীক্ষায় আমরা পাশ না করার কারণেই সুখ নামক পাখিটার অস্তিত্ব আমরা পাচ্ছি না। অনেক স্বপ্ন ছিলো গো, ছেলেদের মানুষের মত মানুষ করবো। দেশ ও দশের কল্যাণে তারা কাজ করবে। দেশে ভালো  মানুষের বড় অভাব গো। আমার আর স্বপ্নটা পুরুন হলো না। আমি মনে হয় আর বেশিদিন বাঁচবো না। আমি মরে গেলে তুমি আমার স্বপ্নটাকে পুরুন করো গো। তোমার কিছুই হবে না। মোড়ল কাকার থেকে টাকা পেলেই আমি ব্যবস্থা করবো। রাত হয়েছে অনেক ঘুমাও এখন তুমি। ঘুম আসছে না গো। গা কেমন ছটপট করছে।  




আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার,

আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ,

আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলাল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলাল্লাহ,

হায়া আলাস সালাহ, হায়া আলাস সালাহ,

হায়া আলাল ফালাহ, হায়া আলাল ফালাহ

আসসালাতু খাইরুম মিনান নাওম, আসসালাতু খাইরুম মিনান নাওম

আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ

মসজিদে আযান হচ্ছে। উঠেপড়ি। নিত্যানন্দের মা, কি গো শুনছো? উঠে পড়ো, তোমাকে হাঁঠতে নিয়ে যাই। আবার তারাতারি ঘুরে আসতে হবে। আজ স্কুলে তারাতারি যেতে হবে। কি গো শুনছো? কি হলো আজ আবার তোমার ঘুম ভাঙছে না। প্রতিদিন তো তুমিই আমাকে ডেকে উঠাও। হে ভগোবান এ কি হলো। তুমি এত তারাতারি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে আমি ভাবতেই পারিনি গো। ওরে নিত্যানন্দ, বিদ্যানন্দ তোর মা আর নেই। কি হয়েছে বাবা?  ও  মা, মা, ও মা। তোর মা আর কথা বলবে না নিত্যানন্দ। তোর মা সারাজীবনের জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে গেছে রে। মা, ও মা, মা, তুমি কথা বলছো না কেন? মা-------ও মা, মা তুমি কথা বলো। মা আর কথা বলবে না রে ভাই। মা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। 

ও আনন্দমোহন, তোমার বাড়ীতে কি হলো? সবকিছু ঠিক আছে তো? না সাবের ভাই। নিত্যানন্দের মা আর নেই। 

ইন্নালিল্লাহি ওয়াাইন্নইলাহি রাজিউন। আল্লাহ ওনাকে বেহেশস্ত নসিব করুক। নিত্যানন্দ তোমারা কান্নাকাটি করো না। কান্নাকাটি করলে তোমার মায়ের আত্মা কষ্ট পাবে। তোমারা সবাই স্বপ্নদ্বীপকে থামানোর চেষ্টা করো। ও তো ছোট মানুষ। মোহন দা, আমি সকলকে খবরটা পৌঁছে দেই। 

 শ্মশ^ানে নিত্যানন্দের মায়ের সৎকার শেষে সকলে বাড়ীতে এসে কেমন যেন নিথর অবস্থাপ্রায়। কোনভাবেই স্বপ্নদ্বীপকে থামানো যাচ্ছে না। দিনের আলো অস্তমিত হয়ে রাত নেমে এলো স্বপ্নদ্বীপের শরীর যেন ঠান্ডায় হিম হয়ে যাচ্ছে। নিত্যানন্দ তুমি সাহেব ডাক্তারকে একটু ডেকে নিয়ে এসো। স্বপ্নদ্বীপের অবস্থা খারাপ হচ্ছে। আমি যাচ্ছি বাবা। 

ডাক্তার কাকা? ও ডাক্তার কাকা? বাড়ীতে আছেন? কে এতো রাতে রে?  আমি কাকা নিত্যানন্দ। কি হয়েছে নিত্যানন্দ? কাকা ছোট ভাইটা সন্ধ্যার পর থেকে বেশ অসুস্থ্য। ওর শরীরটা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে আর কোনমতেই তার ঘুম ভাঙানো যাচ্ছে না। তারাতারি চলো আগে দেখি কি অবস্থা।  

মোহন দাদা কি হয়েছে বলো তো। সাহেব ভাই, শ্মশ^ান থেকে আসার পর কাঁদতে কাঁদতে ও ঘুম আসে। পরে আমি ওর গাঁ ছুয়ে দেখি ওর  গাঁ খুবই শীতল। ডাকাডাকি করেও ঘুম ভাঙাতে পারছি না। তুমি একটু দেখো ভাই। আচ্ছা আমি দেখতেছি। অধিক কান্নাকাটির কারণে আর মানসিক শক পেয়েছে ছেলেটা। ও ওর মায়ের মৃত্যুটা মেনে নিতে পারছে না। বউমা তুমি একটু পানি দাও তো। আচ্ছা কাকা আমি নিয়ে আসতেছি। আর শোন সরিষার তেলও নিয়ে আসো। মোহন দা আমি ওকে দুটো ইনজেকশন দিয়ে দিচ্ছি আর  কিছু ওষুধ দিচ্ছি। এখন ওকে ডাকাডাকি করার দরকার নেই। ওর ক্লান্তিটা কেটে গেলেই জেগে উঠবে। আর বউমা তুমি শরীরে ভালো করে সরিষার তেল মেখে দাও। আমি তাহলে যাই মোহন দা। আগামীকাল একবার আসবো সকালে। ঠিক আছে সাহেব ভাই।  

পরের দিন সকাল বেলা সাহেব ডাক্তার এসে দেখল স্বপ্নদ্বীপ আঙিনায় একটি মাদুরের উপর বসে আছে চুপ করে। মোহন দা ছেলেকে কিছুদিন তুমি তোমার  কোন  নিকট আত্মীয়ের বাড়ীতে রাখার ব্যবস্থা করো। হয়তোবা সেখানে থাকলে কিছুটা ওর মায়ের কথা ভুলে থাকতে পারবে। তাই ভাই ভাবছি সাহেব ভাই। গতকাল যেন তোমার কত টাকা হয়েছিল? টাকা লাগবে না মোহন দা। এমনিতেই তোমার এখন যে অবস্থা। আচ্ছা মোহন দা আমি আসি।

স্ত্রীর মাঙ্গোলিক ক্রিয়াকর্ম শেষ করে আনন্দমোহন বাবু তার শ^শুর বাড়ীতে তার স্ত্রীর একমাত্র বড় ভাইয়ের নিকট স্বপ্নদ্বীপকে রেখে আসেন। 

স্ত্রীর মৃত্যুটা যেন আনন্দমোহন বাবুও মেনে নিতে পারছেন। স্ত্রীর কথা মনে হলে গুমরে কেঁদে উঠে বুকটা। সংসারের হাল যেন তিনি কোন মতেই ধরে রাখতে পারছেন না। একদিকে স্ত্রীর মৃত্যু আবার ৩য় সন্তানের অসুস্থ্যতা তাকে যেন এক গভীর সাগরে ফেলে দিয়েছে। সংসারটা তার কাছে যেন মনে হয় একটি যুদ্ধ ক্ষেত্রে। প্রতিনিয়ত  তিনি এ যুদ্ধে হেরেই যাচ্ছেন। 

স্ত্রী মারা যাওয়া প্রায় ২ বছর হলো। বড় ছেলে নিত্যানন্দ সংসারের অভাব কিছুটা লাঘব করতে পেরেছে। ও দিকে আনন্দমোহন বাবুর চাকুরি বেতনও কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায়ই আনন্দমোহন বাবুর স্ত্রীর কথা মনে পড়ে  আর আক্ষেপ করে বলেন, তুমি  বেচে থাকলে আজ তোমার স্বপ্নগুলো তুমি পুরুন করতে পারতো নিত্যানন্দের মা। 

স্বপ্নদ্বীপ এখন ক্লাস ফাইভে পড়ে। পড়াশুনায় সে বেশ মনোযোগী। নিয়মিত খেলাধুলা, বইপড়া তার নিত্যদিনের রুটিন। বাবার স্কুলেই পড়াশুনা করে স্বপ্নদ্বীপ। স্কুলের সকল শিক্ষকদের মুখেই তার নামডাক। একদিন  তো  প্রধান শিক্ষক আনন্দমোহন বাবুকে ডেকে  বললেন স্যার আপনার ছেলে খুবই মেধাবী। দেখবেন একদিন এই ছেলে আপনার মুখ উজ্জ্বল করবে। তাই যেন  হয় স্যার। ওর মায়ের তো অনেক স্বপ্ন ছিল। কিন্তু তা আর দেখতে পারলো না। আপনার ছেলের জন্য যদি কোন সহযোগীতার প্রয়োজন হয় আমাকে বলবেন। ঠিক আছে স্যার। 

মায়ের মৃত্যুর পর স্বপ্নদ্বীপ তার বাবার কাছেই ঘুমায়। একদিন রাতে ঘুমানোর পূর্বে আনন্দমোহন বাবু ছেলেকে জিজ্ঞেস করে বাবা  তুমি কি হতে চাও বড় হয়ে? বড় হয়ে কি হবে স্বপ্নদ্বীপ তো তা জানতোই না। আর জানবেই কি করে। সে তো কেবল ৫ম শ্রেণীর  শিক্ষার্থী। এই বয়সে তার না জানাটাই স্বাভাবিক। সেই তার বাবাকে জিজ্ঞেস করে  বাবা  আমি বড়  হয়ে কি হবো? ছেলের প্রশ্ন শুনে বাবা হেসে বললেন, আমি সেটাই তোমার কাছ থেকে শুনতে চাচ্ছি। আর তুমিই  আমাকে আবার জিজ্ঞেস করছো? আচ্ছা আমিই বলছি। তুমি  বড় হয়ে একজন  আদর্শ শিক্ষক হবে। একজন  আদর্শ মানুষ  হবে। দেশ ও জাতির উন্নয়নে নিজেকে সমর্পিত করবে। কিভাবে আদর্শ মানুষ হওয়া যায় বাবা? আনন্দমোহন বাবু বুঝতে পারলেন ছেলের মধ্যে প্রশ্ন করার সক্ষমতা হয়েছে। ছেলের উত্তরে বললেন,  আদর্শ মানুষ হওয়ার জন্য তোমাকে ভালো করে পড়াশুনা করতে হবে। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। অনেক জ্ঞান অর্জন করতে হবে। জ্ঞানার্জনের জন্য তোমাকে বেশি বেশি বই পড়তে হবে। একমাত্র বই পড়ার মাধ্যমেই তুমি তোমার সুপ্ত প্রতিভাকে জাগ্রত করতে পারবে। বাবা, প্রতিভা কি? ছেলের প্রশ্ন শুনে আনন্দমোহন বাবু একটু মুচকি হাসলেন। ছেলের প্রশ্নের জবাব তো দিতেই হবে। প্রতিভা হলো কোন ব্যক্তির ভিতরে লুকায়িত শক্তি। যার মাধ্যমে ব্যক্তি তার সৃজনশীলতার পরিচয় দেন। এই অন্তঃনিহিত শক্তির মাধ্যমে ব্যতিক্রমধর্মী সৃষ্টিশীল কর্ম সম্পাদন করেন। আর এই বিশেষ গুণ যার মধ্য নিহিত থাকে তিনিই আসলে প্রতিভাবান। অনেক রাত হলো,  তুমি ঘুমাও স্বপ্নদ্বীপ। ঠিক আছে বাবা। বিদ্যালয়ের পড়াশুনা এবং বাড়ী ফিরে এসে লাইব্রেরীতে পড়ার অভ্যাস এই অল্প বয়সেই স্বপ্নদ্বীপকে অনেকটা পরিবর্তন করে দিলো। এছাড়া ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে বিভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমে বাবার কাছ থেকে জ্ঞান অর্জন করতে থাকে স্বপ্নদ্বীপ। বার্ষিক পরীক্ষার আর ১মাস বাকি। স্বপ্নদ্বীপের লাইব্রেরীতে বসার সময় হয় না। তবে বাবার কাছে নিত্য নতুন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা থেকেই যায় তার। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৬০০শত নম্বরের মধ্যে ৬০০শত নম্বরই অর্জন করে। এ যেন এক বিরাট নজিরের স্বাক্ষী হলো আনন্দমোহন বাবুর বিদ্যালয়। আনন্দমোহন বাবু ফলাফলের পরের দিন ছেলেকে নিয়ে বিদ্যালয়ে গিয়ে তো অবাক। দেখেন স্বয়ং প্রধান শিক্ষক ফুলের মালা নিয়ে বসে আছেন স্বপ্নদ্বীপের গলায় পড়াবেন বলে। অভিনন্দন স্বপ্নদ্বীপ,  অভিনন্দন। তুমি আমাদের বিদ্যালয়ের  গর্ব, আমাদের গর্ব। তুমি একদিন অনেক বড় মানুষ হবে। তোমার দাড়াই দেশ ও জাতির কল্যাণ হবে। আনন্দমোহন বাবু আমি আপনাকে বলেছিলাম এই ছেলে আপনার এবং আপনার স্ত্রীর স্বপ্ন সার্থক করবে। এই নাও স্বপ্নদ্বীপ মিষ্টি খাও। স্যারেরা আপনারা মিষ্টি খাওয়ান স্বপ্নদ্বীপকে। এই ছেলে-মেয়েরা আসো,আসো তোমারা মিষ্টি নাও। মিষ্টি খাওয়ার শেষে হেড স্যার স্বপ্নদ্বীপকে উপহার হিসেবে দিলেন একসেট বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর নতুন বই এবং একসেট পোশাক। নতুন বই আর পোশাক পেয়ে স্বপ্নদ্বীপ তো মহাখুশি। সকলের কাছে আর্শিবাদ নিয়ে স্বপ্নদ্বীপ বাড়ীতে ফিরে আসে। নতুন বই পেয়ে তো স্বপ্নদ্বীপের যেন চ্যালেঞ্জ শুরু হলো। সব বই পড়ে তাকে শেষ  করতে হবে। ইংরেজী বছরের প্রথম দিন আনন্দমোহন বাবু ছেলেকে নিয়ে তার বিদ্যালয়ে গেলেন। হেড স্যারের কাছ থেকে পরীক্ষার নম্বরপত্র এবং প্রশংসা পত্র তুলে নিয়ে ভ্যানগাড়ীতে করে রুপগঞ্জ হাইস্কুলে পৌঁছিলেন। নতুন বিদ্যায়ে অনেক শিক্ষার্থী একসঙ্গে দেখে  স্বপ্নদ্বীপ একটু হকচকিত হয়ে  গেলো। ছেলেকে নিয়ে সরাসরি প্রধান শিক্ষকের রুমে ঢুকলেন আনন্দমোহন বাবু। সালাম জানিয়ে ছেলেকে পরিচয় করিয়ে  দিলেন  প্রধান শিক্ষকের সংগে। স্বপ্নদ্বীপ প্রধান শিক্ষককে সালাম জানালো। আসসালামুওয়ালাইকুম আসসালাম স্যার। ওয়াআলাইকুম আসসালাম। আনন্দমোহন বাবু আপনী চেয়ারে বসেন। স্বপ্নদ্বীপ তুমিও বসো। আনন্দমোহন বাবু আপনার ছেলের কাগজগুলো আমাকে দেন। কি কি লাগবে স্যার? আপনার ছেলের পরীক্ষার ফলাফলের সনদপত্র, স্কুলের প্রশংসাপত্র, জন্মনিবন্ধন এবং ৩কপি ছবি। এই নিন স্যার। বাহঃ স্বপ্নদ্বীপ তো খুবই ভালো স্টুডেন্ট। ও তো ৬০০ নম্বরের মধ্যে ৬০০ই পেয়েছে। অভিনন্দন তোমাকে স্বপ্নদ্বীপ। এই রকম ভালো ফলাফলের ধারা তুমি আমাদের বিদ্যালয়েও অব্যাহত রাখবে। এই রহমান? জ¦ী স্যার। শফিক সাহেবকে পাঠাও তো আমার রুমে। জ¦ী স্যার। আসসালামুয়াআলাইকুম স্যার। ওয়াআলাইকুম আসসালাম। শফিক সাহেব আপনাকে পরিচয় করিয়ে দেই। এই হলো স্বপ্নদ্বীপ। আনন্দমোহন বাবুর ছেলে। এ ছেলে বেশ মেধাবী। ওকে আপনী ১টি বুকলিস্ট দিয়ে দিন আর ওর শ্রেণীকক্ষটি দেখিয়ে দিন। আনন্দমোহন বাবু আপনী শফিক সাহেবের সংগে যান। ঠিক আছে স্যার। আসসালামুআলাইকুম। 

পরের দিন আনন্দমোহন বাবু বাজারের একটি লাইব্রেরী থেকে সব কিনে নিয়ে আসলেন। নতুন বই পেয়ে স্বপ্নদ্বীপ তো মহাখুশি। শুরু হলো তার জীবনের এক নতুন অধ্যায়। নতুন বিদ্যালয়ে অদম্য উদ্দ্যম নিয়ে চলতে থাকে শিক্ষার্জন। অল্পকিছুদিনের মধ্যেই সে বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। শিক্ষকরা তার বুদ্ধিদীপ্ত প্রতিভার গুণগান করতে থাকে একে অপরের সাথে। সর্বোচ্চ সংখ্যক নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয় ৭ম শ্রেণীতে। ৭শ্রেণীতে অধ্যয়রত সময়েই স্বপ্নদ্বীপ একটি অভিনব একটি প্রস্তাব পেশ করেন প্রধান  শিক্ষকের নিকট। একদিন প্রধান শিক্ষকের রুমে ঢুকে সালাম জানায় স্বপ্নদ্বীপ। কিছু বলবে তুমি? হ্যাঁ স্যার। আমি কিছু বলতে চাই। ওহ আচ্ছা ঠিক আছে বলো। তুমি দাড়িয়ে কেন। বসো বসো। ধন্যবাদ স্যার। স্যার আমাদের বিদ্যালয়ে প্রায় ৩০০জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ৩০০জন শিক্ষার্থীর মধ্যে অনেক জনেরই আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। আর এ কারণেই অনেক শিক্ষার্থীকে ঝড়ে পড়তে হয় মাঝ পথে। পাহাড় সম স্বপ্ন তাদের স্বপ্নই থেকে যায়। ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে থাকা কালীন সময়েই দেখেছি আমার অনেকে সহপাঠি পড়াশুনা ছেড়ে দিয়েছে। এর একমাত্র কারণ আমি পেয়েছি সেটা হলো চরম দারিদ্রতা। তাদের লেখাপড়ার প্রতি  আগ্রহ  থাকলেও দারিদ্রতার বেড়াজালে পিষ্ট হয়েই বাধ্য হয়েছে পড়া ছাড়তে। যা আমাকে খুবই কষ্ট দিয়েছে। আমি একটি প্রস্তাব রাখতে চাই। কি প্রস্তাব তোমার স্বপ্নদ্বীপ? স্যার আমরা সকলেই সপ্তাহের প্রথম দিন ৫টাকা করে চাঁদা দিবো। এই জমাকৃত চাঁদা দিয়ে আমরা তাদেরকেই সাহায্য করতে পারি যাদের পড়াশুনা চালিয়ে নেওয়ার মত সক্ষমতা নেই। খাতা-কলম এমনকি যারা বই কিনতে সক্ষম নয় তাদের মধ্যে এই চাঁদার টাকা বিতরণ করা হবে। তোমার প্রস্তাব যথাযথ স্বপ্নদ্বীপ। তোমার সাথে আমিও একমত। আমরা শিক্ষকরাও সাপ্তাহিক চাঁদা দিবো। আমি এ ব্যাপারে আগামীকাল একটি আলোচনার আয়োজন করার জন্য কেরানী সাহেবকে আজই নিদের্শ দিবো। ঠিক আছে স্যার। অনেক অনেক ধন্যবাদ স্যার। ঠিক আছে। তুমি ক্লাসে যাও। শফিক, সোবহানকে আমার রুমে আসতে বলো। যাচ্ছি স্যার। 

আসসালামুআলাইকুম স্যার। ওয়াআলাইকুম আসসালাম। সোবাহন সাহেব এই নোটিশটা নিয়ে গিয়ে সকল শিক্ষার্থীকে জানান এবং  স্যারদেরকেও জানান আর প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে বলবে তাদের অভিভাবকে আগামীকাল সকাল ১০টায় যেন বিদ্যালয়ে আসে। ঠিক আছে স্যার। আমি এখুনি যাচ্ছি। 

পরেরদিন সকাল ১০টায় সময় সকলেই মিটিং রুমে উপস্থিত। উপস্থিত সকল শিক্ষক, কর্মচারী ও সম্মানিত অভিভাবকগণকে আমার সালাম। আসসালামুআলাইকুম। আশাকরি আপনারা সকলেই ভালো আছেন। আমি আজ একটি বিশেষ কারণে আপনাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। বিগত বছরে আমাদের বিদ্যালয়ের ২০ জন শিক্ষার্থী ক্লাস সিক্সেই ঝড়ে পড়েছে। এছাড়াও অন্যান্য ক্লাসেও ঝড়ে পড়া লক্ষ্য করা গেছে। কারণ হিসেবে তারা দেখিয়েছে তাদের দারিদ্রতা। পড়াশুনার খরচ চালানোর মত সক্ষমতা তাদের নেই। আমরা একটি উদ্দ্যোগ গ্রহণ করতে চলেছি। যে সব ছেলে-মেয়েরা টাকার অভাবে মাঝপথে পড়াশুনা ছেড়ে দিচ্ছে তাদের জন্য বিদ্যালয় থেকে সহযোগীতা করার জন্য একটি তহবিল গঠন করতে চাচ্ছি। প্রত্যেক শিক্ষার্থী প্রতি সপ্তাহে ৫টাকা করে চাঁদা দিবে এবং যারা অসমথ্য তাদের  দেওয়া লাগবে না। আমাদের শিক্ষকগণও সাপ্তাহিক চাঁদা প্রদানে অংশগ্রহণ করবে। আপনারা কি রাজি আছেন আমার এই প্রস্তাবে? হ্যাঁ স্যার আমরা রাজি। আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ। ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমাদের বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী স্বপ্নদ্বীপকেও। সেই এ বিষয়টি নিয়ে প্রথমে আমার কাছে প্রস্তাব করে। আমি আর বেশি সময় নিবো না। সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করে এখানেই আমার কথা শেষ করছি। আসসালামুআলাইকুম। 

পরেরদিন প্রত্যেক ক্লাসএ গিয়ে প্রধান শিক্ষক মহোদয় শিক্ষার্থীদেরকে বলেন, তোমরা তোমাদের চাঁদা স্বপ্নদ্বীপকেই দিবে। সে আমাকে সব চাঁদা উত্তোলনের পর আমার কাছে জমা দিবে। স্বপ্নদ্বীপের শুরু হলো নতুন নেতৃত্ব। তার প্রচেষ্টায় ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীরাও পুনরায় বিদ্যালয়ে ফিরে আসতে শুরু করলো। স্কুলের বিভিন্ন কার্যক্রম আর নিজের পড়াশুনা বেশ দক্ষতার সহিত  বাস্তবায়ন করে চলছে। 

আবারও ভালোফলের মাধ্যমে অষ্টম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয় ৮ম শ্রেণীতে। এবার একটু চাপ বেড়ে গেলো স্বপ্নদ্বীপের। বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ  করতে  হবে। অবশ্য স্বপ্নদ্বীপ এ নিয়ে  কোন উদ্বিগ্ন নয়। কারণ সে তার পড়াশুনা নিয়মিত করে থাকে। যে সব শিক্ষার্থী তাদের পড়াশুনা নিয়মিত করে না তাদেরকেই ঝামেলায় পড়তে হয়। একদিন প্রধান  শিক্ষক স্বপ্নদ্বীপকে ডেকে বললেন তুমি আমাদের  বিদ্যালয়ের গর্ব। আমরা তোমাকে নিয়ে অনেক গর্ব  করি। তুমি এবার বৃত্তি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করবে এটাই আশা করি। তোমার ক্লাসের যারা এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে তাদেরকেও তুমি একটু পড়াশুনার ক্ষেত্রে সহযোগীতা করো। ঠিক আছে স্যার আমি চেষ্টা করবো। 

বাবা তুমি ঘুমাও নি এখনও। না বাবা, আজ তোমার মায়ের কথা খুব বেশি মনে  পড়ছে। মায়ের কথা খুব বেশি একটা মনে নেই বাবা আমার। তুমি তো অনেক ছোট ছিলে সেই জন্য ভুলে গিয়েছো। আচ্ছা যাই হোক ঘুমিয়ে পড়ো। 

বউমণি আমার খাবারটা বাটিতে তুলে দাও। আমি ভাত তুলে দিয়েছি। নিয়ে যাও। ঞযধহশ ণড়ঁ বউমণি। 

কি রে তোরা আজকে এত সকালেই হাজির হয়েছিস স্কুলে। হুম, আজকে একটা বিশেষ দিন। সেই জন্য  আমরা  সবাই  আজ সকালেই এসেছি। বলতো দেখি কেন আজকে বিশেষ দিন। সঠিক মনে করতে পারছি না রে। তোরাই বল। 

কিরে স্বপ্নদ্বীপ তোর জন্মদিন আর তুই জানিস না। সরি রে। আমার একদমই মনে ছিল না। মা থাকলে হয়তো মনে করে দিতো। 

আচ্ছা যাইহোক। আমরা একটি কেক নিয়ে এসেছি। টিফিন সময় হ্যাপি বার্ডডে সেলেবারেট করবো। ধন্যবাদ তোদের। তোরাই  তো  আমার সব বন্ধু।  হুম সঠিক বলেছিস। আর তুই হলি আমাদের গুরু। আরে গুরু তোর জন্যই তো আমরা অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। চল চল ঘণ্টা পড়েছে। লাইনে দাড়াতে হবে। এই তোরা চল সবাই।  

শরীর চর্চার স্যার সেকেন্দার আলী খুবই রাগী একজন মানুষ। ওনার হাতে ১টা বেত থাকতো। যাতে ছেলে-মেয়েরা বেশি  কথা  বলতে না  পারে। এই তোমরা সোজা হয়ে লাইনে দাঁড়াও। কাঁধে কাঁধে হাত দিয়ে দাঁড়াও। শামিম তুমি এখানো এসো। কোরআন তেলওয়াত করো। 

বিসমিল্লাহির রহমা-নির রহি-ম।

আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আ -লামি-ন।

আররহমা-নির রাহি-ম।

মা-লিকি ইয়াওমিদ্দি-ন।

ইয়্যা-কা না’বুদু ওয়া ইয়্যা-কা নাসতাই’-ন

ইহদিনাস সিরাতা’ল মুসতাকি’-ম

সিরাতা’ল্লা যি-না আনআ’মতা আ’লাইহিম গা’ইরিল মাগ’দু’বি আ’লাইহিম ওয়ালা দ্দ-ল্লি-ন।

                                                                                 আমিন। 

স্বপ্নদ্বীপ এখানে এসো, গীতা পাঠ করো।  

"যদা যদা হি ধর্মস্য গøানির্ভবতি ভারত।

অভ্যুত্থানম অধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্॥

পরিত্রাণায় হি সাধুনাং বিনাশয় চ দুষ্কৃতাম।

ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে॥"       

শপথ পাঠ করো। ঠিক আছে স্যার। 

শপথ : আমি শপথ করছি যে, মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখব। দেশের প্রতি অনুগত থাকব। দেশের একতা ও সংহতি বজায় রাখার জন্য সচেষ্ট থাকব। হে প্রভু আমাকে শক্তি দিন, আমি যেন বাংলাদেশের সেবা করতে পারি এবং বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারি। আমিন।

ঠিক আছে স্বপ্নদ্বীপ তুমি যাও। এই তোমরা এবার সবাই একসংগে জাতীয় সংগীত গাও।  

আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।

চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি।

ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে,

মরি হায়, হায় রে -

ও মা, অঘ্রানে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি।

কী শোভা, কী ছায়া গো, কী স্নেহ, কী মায়া গো-

কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে।

মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো,

মরি হায়, হায় রে-

মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়নজলে ভাসি।

শরীর চর্চার শেষ, এই তোমরা একদিক থেকে লাইন হয়ে, যে যার ক্লাসে চলে যাও। 

স্বপ্নদ্বীপ দাদা এই নিন আমাদের এই সপ্তাহের চাঁদার টাকা। ধন্যবাদ ভাই। এখন আর আগের মত কেউ টাকার অভাবে পড়া ছেড়ে দেয় না। শিক্ষক এবং অভিভাবকগণের হৃদয়ের মণি কোটায় জায়গা করে নিতে থাকে তার সৃজনশীল কর্মের মাধ্যমে। এভাবেই স্বপ্নদ্বীপের কার্যক্রম চলতে থাকে। অষ্টম শ্রেণীর বৃত্তি পরীক্ষায় জেলা পর্যায়ে ১ম স্থান অধিকার করে। বিদ্যালয় থেকে এখন  স্বপ্নদ্বীপের মেধার জানান পেল জেলার সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী। এখন স্বপ্নদ্বীপের দায়িত্ব যেন আরো বেরে গেলো। নবম শ্রেণীতে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর পড়াশুনার প্রতি তার আগ্রহ যেন আরো বাড়তেই থাকলো। বিজ্ঞানের নানান বিষয় অধ্যয়নের পাশাপাশি শ্রেণী শিক্ষকের সহায়তায় বিজ্ঞানের ব্যবহারিক কার্যক্রমগুলো সম্পাদন করে বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ল্যাবেই। তার উৎসাহ উদ্দীপনায় যোগ দেয় তার সহপাঠীরাও। 

অনেক রাত হলো স্বপ্নদ্বীপ ঘুমাও তুমি এখন। ঘুমাবো বাবা আর একটু পর। তুমি যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছো এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখো তাহলেই তুমি তোমার মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে। 

কী স্বপ্ন ছিল বাবা মায়ের? তোমার মা তোমার বড় দাদা বিদ্যানন্দকে একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। যে সমাজ ও দেশের বৃহত্তর সার্থে সর্বদা কাজ করত। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার নিয়মের কাছে তার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেলো। হঠাৎ তার অজানারোগে আক্রান্ত হওয়ায় তোমার মা অনেকটা মানসিক ভাবে দূর্বল হয়ে পড়েন। তোমার বড় দাদা নিত্যানন্দের মৃত্যুও তাকে অনেক পীড়া দিয়েছে। নিজের পীড়া, সন্তানের মৃত্যু এসবই যেন তার আয়ু নিঃশেষ করে দিয়েছে। অবশেষে বিধির বিধানে সায় দিয়ে মৃত্যুকে বরণ করে নিতেই হলো। যে দিন তোমার মা মারা গেলো সেদিন রাতে অনেক কিছুই নিয়ে গল্প হচ্ছিলো। রাত তখন ২টা তোমার  মাকে যখন ঘুমাতে  বলছিলাম, তোমার মা বললো আজ আমার ঘুম  আসছে না, গা ছটফট করছে। আমি বললাম রাত তো অনেক হয়েছে এবার চোখ দুটো বন্ধ করে থাকো। এমনিতেই ঘুম আসবে। তারপরে আমিও ঘুম আসলাম। প্রতিদিন তোমার মা’ই আমাকে ভোরবেলা ঘুম থেকে ডেকে উঠাতো। কিন্তু সেদিন আর আমাকে ডাকে নি। আর ডাকবেই বা কি করে সে তো আর বেঁচে নেই। যাই হোক তোমাকে অবশ্যই তোমার মায়ের স্বপ্ন পুরুন করতে হবে। হ্যাঁ, বাবা আমি অবশ্যই পুরুন করার চেষ্টা করবো। 

সামনে আর দুই মাস বাকি স্বপ্নদ্বীপের মাধ্যমিক পরীক্ষার। রাত জেগে পড়াশুনা করায় তার শরীরটা একটু খারাপ হচ্ছিলো। সাংসারিক অভাব অনটনের কারনে ছেলেকে ভালোমন্দ খাওয়াতেও পারেন না আনন্দমোহন বাবু। শুধু মাত্র নিজ বাড়ীতে পালিত গরুর দুধই ছিল তার পুষ্টির প্রধান উৎস। ইতিমধ্যে বড় ছেলে সদানন্দও তার স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা পরিবার গঠন করেছে। রান্না করা থেকে শুরু করে সংসারের সব কাজই আনন্দমোহন বাবুকেই করতে  হয়। ভোরে ঘুম থেকে উঠে ¯œান করে ঈশ^রের প্রার্থনা করে সকাল হওয়ার সাথে সাথে গরু গোয়াল থেকে বের গোসালায় বেঁধে রাখেন। তারপর রান্নার কাজ শুরু করেন। আর এই ফাকেই স্বপ্নদ্বীপ গরুর জন্য ঘাস কেটে রাখে, যাতে তার বড় ভাই বিদ্যানন্দ গরুকে সেই কাটা ঘাস দিতে পারে। তার পুর বাবা-ছেলে খাওয়া শেষ করে দুপুরের ভাত সংগে নিয়ে স্কুলের দিকে রওনা দেন। আবার স্কুল ছুটি হলে স্বপ্নদ্বীপ বাবার স্কুলের সামনের একটি দোকানে অপেক্ষা করে বাবার জন্য। পরীক্ষার আর মাত্র  ১ সপ্তাহ বাকি সে আর স্কুলে যায় না। বাড়ীতেই তার পড়াগুলোর রিভিশন সেরে নিচ্ছে। সে তার প্রস্তুতির কোন ঘাটতি  রাখে নি। পরীক্ষার আগের দিন হঠাৎই তার গায়ে জ¦র আসলো। আনন্দমোহন বাবু দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন। রাত তখন ১২টা ওর গায়ে কাপুনী শুরু হয়ে গেলো। বড় ছেলে সদানন্দ ও  তার  বৌকে ডেকে নিয়ে আসলেন। সদানন্দকে সংগে করে নিয়ে চললেন সাহেব ডাক্তারের বাড়ীতে।  

ও সাহেব ভাই। সাহেব ভাই, বাড়ীতে আছেন? এত রাতে আবার কে এলো রে। ও গিন্নি উঠে দেখো তো কে ডাকছে। আর বাঁচি না বাবু এমন  এক পেশায় জড়াইছো তুমি, দিন নাই রাত নাই সব সময় দৌড়ায়  রুগীর বাড়ীতে। কে আসবে। দেখো কেউ আসছে ডাকার জন্য। আরে মোহন দাদা যে, কি হয়েছে গো? ভাবি আমার ছোট ছেলেটা ওর আগামীকাল পরীক্ষা আর আজ রাতেই ওর গায়ে  ভীষণ জ¦র আসছে। ওমা কি বলছো গো। ও সুমাইয়ার বাবা উঠো  উঠো তারাতারি। মোহন দাদার ছেলেটা খুবই অসুস্থ্য। আল্লাহ তুমি ছেলেটাকে হেফাজত  করো।  মা মরা এতিম ছেলেটা। আ-হা রে কি মেধাবীই না ছেলেটো। সে কি না পরীক্ষার আগে অসুস্থ্য। আল্লাহ্ তুমি তারাতারি সুস্থ্য করে দাও ছেলেটাকে। 

সুমাইয়ার মা আমাকে ব্যাগটা দাও। চলো মোহন দা। চলো সাহেব ভাই তারাতারি। চলো চলো মোহন দা।  

বউমো সাহেব ভাইকে একটা চেয়ার এনে দাও তো।

লাগবে না মোহন দা। আমি বিছানাতেই বসছি। দ্বীপ! ও দ্বীপ উঠো তো বাবা। আমি তোমার ডাক্তার কাকু আসছি। কিছুই হবে না  তোমার উঠো। তুমি সকালের মধ্যেই  ভালো হয়ে যাবে। অবশ্যই তুমি পরীক্ষা দিতে যেতে পারবে আগামীকাল আর পরীক্ষাও ভালো হবে তোমার ইনশেআল্লাহ্। ও বউমা এক গøাস পানি দাও তো মা। এই নিন কাকু। এই যে, ইনজেকশন দিলাম আর এই ওষুধগুলো  এখুনি খেয়ে নাও তো দ্বীপ। সকাল হতে হতেই তুমি অনেকটা সুস্থ্য হয়ে যাবে। কোন ভয়ের  কারণ নেই। কোন দুশ্চিন্তার কারণ নেই। সাহস রাখো। মোহনদা তুমি আমাকে একটু রেখে আসো। ঠিক আছে সাহেব ভাই চলেন। পরের দিন সকাল বেলা স্বপ্নদ্বীপ কিছুটা সুস্থ্যতা অনুভব করে। সকলের কাছে আর্শিবাদ নিয়ে বাবার সাথে সাইকেলে করেই রওনা দেয় বাবা-ছেলে পরীক্ষার কেন্দ্রে। মোহন বাবু ১দিনের ছুটির জন্য আগে থেকেই প্রধান শিক্ষককে বলে রেখেছিলেন। সেই জন্য পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রের বাহিরেই অপেক্ষা করেন আনন্দমোহন বাবু। প্রথম পরীক্ষা ছিল ইংরেজী। অসুস্থ্য থাকলেও স্বপ্নদ্বীপ পূর্ণ মার্কসের উত্তর দিয়ে পরীক্ষার হল থেকে বের হয়। অনেক খুশি নিয়েই পরীক্ষার হল  থেকে বের হয়। অসুস্থ্য থাকলেও পরীক্ষায় কোন সমস্যাই হয় নি তার। কারণ পরীক্ষার জন্য পূর্ব প্রস্তুতি ছিলো খুবই ভালো। ধারাবাহিক ভাবে সকল পরীক্ষা শেষ হয় স্বপ্নদ্বীপের। এবার ফলাফল বের হবার অপেক্ষা। ফলাফল বের হতে সময় লাগবে প্রায় ৩ মাস। এই ৩ মাস তো বসে থাকা যাবে না। বাবাকে বলে একাদশ শ্রেণীর জন্য বই সংগ্রহ করে দিতে।  নতুন বই কেনার সামর্থ্য ছিলো না আনন্দমোহন বাবুর। তাই ছেলের জন্য পুরাতুন বই সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন। এ পুরাতুন বই দিয়েই শুরু হয় স্বপ্নদ্বীপের নতুন ক্লাসের পড়া। পাশাপাশি বাবার লাইব্রেরীতে সংগৃহীত না পড়া অনেক বইও পড়া শুরু তার। বই পড়া যেন তার এক বড় নেশা। এ নেশার ঘোর যেন কখনই কাটবে না তার। নতুন নতুন বই পড়ার পর যে সব প্রশ্নের উদ্রেগ হয় মনে সে সব কিছু নিয়ে ঘুমানোর আগে বাবার কাছে আলোচনা করে। পিতা আর পুত্রের জ্ঞান আহরণের এক নতুন যাত্রা শুরু হলো। এভাবেই ৩মাস পর উপস্থিত হলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ফলাফলের দিন আনন্দমোহন বাবু পূর্বের দিনের ন্যায় ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে ঈশ^রের প্রার্থনা করে ভাতা রান্না শুরু করেন। এখন ৮টা বাজে বাবা বিদ্যানন্দ দাদা এখনও ঘুম থেকে উঠলো না। আমাদের তো রেজাল্ট নেওয়ার জন্য সেণ্টারে যেতে হবে। ও দাদা? ও দাদা? দরজা খোলো। দাদা দরজা খোলো। বাবা কোন সারা পাচ্ছি না তো। 

বিদ্যানন্দ, ও বিদ্যানন্দ। দরজা খোলো। অনেক বেলা হয়েছে তো। আজ এত দেরি করতেছো কেন? না হবে না, স্বপ্নদ্বীপ তুমি তোমার দাদা সদানন্দকে ডেকে নিয়ে আসো তো। আচ্ছা বাবা। দাদা? ও দাদা। কি হয়েছে রে এত দৌড়াচ্ছিস কেন? দাদা বিদ্যানন্দ  দাদা এখনও ঘুম থেকে উঠে নি। বাবা অনেক ক্ষণ থেকে ডাকছে। কিন্তু দাদা তো উঠছেই না। চল দেখি। 

বিদ্যানন্দ, ও বিদ্যানন্দ। কি হয়েছে রে ভাই?  অসুস্থ্য  নাকি? নাহ কোন সারা পাওয়া যাচ্ছে না।   



Comments